বরিশাল নগরীর ২২নং ওয়ার্ড জিয়া সড়ক উত্তর ১ম গলি এলাকার দরগাবাড়িতে হাউজিংয়ের প্লট মালিকদের অবৈধভাবে সুবিধা দিতে সড়ক নির্মাণে বাঁধা দেয়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার দুই ওসির বিরুদ্ধে। এমনকি ভূক্তভোগীকে থানায় ডেকে গারদে আটকে রেখে মীমাংসার প্রস্তাব দেন ওসি। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে মোঃ সেলিম হাওলাদার নামের এক জমির মালিককে কারাগারে পাঠিয়ে রাতারাতি সড়ক নির্মাণের নির্দেশ দেন ওসি আরিচুক হক। পরে নিরুপায় হয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভূক্তভোগী জমির মালিকরা।
ভূক্তভোগীরা হলেন- মোঃ সেলিম হাওলাদার, তার বোন সেলিনা রহমান ও সেলিনার মেয়ে মারুফা আকন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে- মোঃ সেলিম হাওলাদার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ২২১১ নং খতিয়ানের ৪২৪ নং দাগের জমিতে মালিকদ্বয় যৌথভাবে ৬ ফুটের একটি রাস্তা নির্মাণ করেন। সেই রাস্তাটি আলাল গং হাউজিং মালিকদের কাছ থেকে ১৭ লক্ষ টাকা নিয়ে তাদের কাছে বিক্রি করে এবং ৬ ফুটের রাস্তাটি ১২ ফুট করে সিটি কর্পোরেশনের কাছে দেয়ার পায়তারা চালায়। ওই রাস্তায় জমি দিতে অস্বীকৃতি জানান মোঃ সেলিম হাওলাদার ও তার স্বজনরা। এবং সাফ জানিয়ে দেন রাস্তাটি যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই থাকবে। এ নিয়ে ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত দ্বন্দ্ব চলে আসছে। পুররায় ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) আবার রাস্তাটি নতুন করে করার পায়তারা চালায় আলাল গং। এতে সেলিম বাঁধা দেওয়ায় ঘটনাস্থলে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আরিচুল হক আসেন। তিনি আসার পরে তাদের কোন কথা না শুনে সেলিমকে গাড়িতে তোলার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরের দিন ৫ এপ্রিল (শুক্রবার) আবার রাস্তার কাজ শুরু করলে সেলিম হাওলাদার ও তার স্বজনরা পুনরায় বাঁধা দিলে ওসি (অপারেশন) বিল্পব কুমার মিস্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে ওসি সাহেব ডেকেছে বলে সেলিমকে থানায় নিয়ে গারদে আটকে রাখেন। এরপর ওসি আরিচুল হক থানা গারদে এসে বিষয়টি মিট-মীমাংসার জন্য সেলিমকে প্রস্তাব দেয়। এতে সেলিম রাজি না হওয়ায় আব্দুল খালেক নামের এক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে দিয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করান। পরের দিন শনিবার সেলিমকে স্পেশাল কোর্টের মাধ্যমে জেল-হাজতে প্রেরণ করেন।
<
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়- এই সুযোগে নারী কাউন্সিলর রেশমির নেতৃত্বে ও ওসির সহযোগীতায় শনিবার পুনরায় রাস্তার কাজ শুরু করেন আলাল গং। এদিকে সেলিম সোমবার কোর্টের মাধ্যমে জামিন পেয়ে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে দেখা করে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন। তখন তিনি সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীকে বাকি কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন এবং বলেন উক্ত রাস্তাটি সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত নয়। নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলীকে বলেন- আপনি গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে গিয়েও নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশ উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যান। এতে তারা পুনরায় বাঁধা দিলে ঘটনাস্থল থেকে সবাই চলে যায় এবং আলাল মিথ্যা কথা বলে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশকে বলে তাকে মারধর করে আটকে রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে সেলিমের বোনের কাছে আলালের কথা জিজ্ঞাস করলে তখন তার বোন পুলিশকে আলালের ঘরে নিয়ে যায়। এ সময় আলালের স্ত্রী বলে আলাল তাদের পুরাতন বাড়ি গেছে। এরপর পুলিশ সেলিমের বোনকে বলে বিকেলে থানায় যেতে। বিকেলে তার বোন থানায় গিয়ে জানতে পারে আলাল সেলিম ও তার বোনের বিরুদ্ধে প্রাণ নাশের একটা মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে মোঃ সেলিম হাওলাদার বলেন- পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ২২১১ নং খতিয়ানের ৪২৪ নং দাগের জমিতে যৌথভাবে ৬ ফুটের একটি রাস্তা তৈরী করেন। ওই রাস্তাটি আলাল গং হাউজিংয়ের প্লট মালিকদের কাছে ১৭ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেন। এমনকি ৬ ফুট রাস্তাকে ১২ ফুট রাস্তা করা ও রাস্তাটি সিটি কর্পোরেশনে দেওয়ার জন্য পায়তারা করেন। হাউজিংয়ে ও সিটি কর্পোরেশনকে ব্যক্তিগত জমির উপরে রাস্তা দিতে অস্বীকৃতি জানান তারা। এবং সাফ জানিয়ে দেন রাস্তাটি যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই থাকবে।
তিনি আরও বলেন- এ নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে। এরপর হঠাত গত ৪ এপ্রিল রাস্তাটি নতুন করে করার পায়তারা চালায় আলাল গং। এতে বাঁধা দেওয়ায় ঘটনাস্থলে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আরিচুল হক আসেন। তিনি আসার পরে আমাদের কোন কথা না শুনে আমাকে গাড়িতে তোলার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরের দিন ৫ এপ্রিল (শুক্রবার) আবার রাস্তার কাজ শুরু করলে পুনরায় বাঁধা দিলে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (অপারেশন) বিল্পব কুমার মিস্ত্রী ঘটনাস্থলে এসে ওসি সাহেব ডেকেছে বলে আমাকে থানায় নিয়ে গারদে আটকে রাখে। এরপর ওসি আরিচুল হক থানা গারদে এসে বিষয়টি মিট-মিমাংসার কথা বলেন। এতে আমি রাজি না হওয়ায় আব্দুল খালেক নামের এক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে দিয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করান। পরের দিন শনিবার তাকে স্পেশাল কোর্টের মাধ্যমে জেল-হাজতে প্রেরণ করেন।
সেলিম বলেন- আমি কারাগারে থাকার সুযোগে নারী কাউন্সিলর রেশমির নেতৃত্বে ও ওসির সহযোগীতায় শনিবার পুনরায় রাস্তার কাজ শুরু করেন। পরে আমি সোমবার জামিন পেয়ে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি প্রকৌশলীকে গিয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে গিয়েও কাজ চালিয়ে যায়। এতে তারা পুনরায় বাঁধা দিলে ঘটনাস্থল থেকে সবাই চলে যায়। পরে জানতে পারি আলাল আমার ও আমার বোনের বিরুদ্ধে প্রাণ নাশের একটা মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। যার পিছনে ওসি প্রত্যক্ষ ইন্ধন রয়েছে। আমি সঠিক বিচার পেতে পুলিশ কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি এর বিচার চাই।
সেলিনা রহমান বলেন, আমার মেয়ে মারুফা আকনের ভবনের পাশের (নিজেদের) জমি পাশ্ববর্তী বাসিন্দাদের হাঁটার জন্য ছেড়ে দেই এবং দীর্ঘদিন যাবৎ সেখান থেকে বেশ কয়েকটি পরিবার হাটাচলা করেন। সম্প্রতি একই এলাকার মৃত আফছার হাওলাদারের ছেলে আলাল হাওলাদার পাশ্ববর্তী প্লট মালিকদের কাছ থেকে আমাদের জমির উপর দিয়ে হাঁটার জন্য সড়ক নির্মাণ করে দেওয়ার নাম করে ১৭ লক্ষ টাকা গ্রহন করেন। আমার মেয়ে সড়কের বিষয়টি নিয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করেন।
তিনি আরও বলেন- শুধু তাই নয় – সড়কের মাঝে আদালতের একটি নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হলেও আলাল হাওলাদার কোন প্রকার আইন আদালতের তোয়াক্কা না করে সেখানে পাকা সড়ক নির্মাণ কাজ করছিলেন। এতে আমার ভাই সেলিম হাওলাদার বাঁধা দিলে তাকে থানায় ডেকে গারদে আটকে রেখে মীমাংসার প্রস্তাব দেন ওসি। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে রাতারাতি সড়ক নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন ওসি।
তিনি আরো বলেন- অবৈধভাবে সড়ক নির্মাণ কাজে প্রতক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে সংরক্ষিত (২২, ২৩, ও ২৪ নং ওয়ার্ডের) কাউন্সিলর রেশমী বেগম।
এদিকে ২২, ২৩, ও ২৪ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানের রাস্তা ও ড্রেনের বেহাল দশা থাকলেও সেদিকে নজর না দিয়ে ব্যক্তিগত জমির উপর দিয়ে হাউজিংয়ের রাস্তা নির্মাণ নিয়ে কাউন্সিলর রেশমী বেগমের ভূমিকা রহস্যজনক বলে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের ভাষ্য- ওসি আরিচুল হক সেলিমের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। উনি সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন যা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। তার এ ধরনের আচরণ পুলিশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। মানুষ পুলিশের দারস্থ হয় ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় সেখানে যদি এমন হয়রানির শিকার হতে হয় তাহলে পুলিশের উপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে যাবে।
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিচুল হক ছুটিতে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির বলেন- প্রতিদিন হাজার হাজার অভিযোগ আসে সব মাথায় রাখা সম্ভব না। অভিযোগ দিলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।